Tuesday, March 11, 2014

বুকের দুধ বাড়াতে করণীয়



তানভীর আহমদ
বুকে কম দুধ আসা অনেক মায়ের জন্য একটি বড় সমস্যাকিন' এর সমাধান খুব সহজদুধের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য মূলত যে বিষয়গুলো জরুরি সেগুলো হলো শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং বিশেষ কিছু খাবার খাওয়া যে খাবারগুলো দুধের পরিমাণ বাড়াতে সরাসরি সহযোগিতা করে
শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম
বুকে দুধ কম এলে অনেক ক্ষেত্রে মাকে অপয়াহিসেবে অপবাদ দেয়া হয়কিন' বিষয়টি সম্পূর্ণই ভ্রান্তএরূপ অপবাদে মা মানসিকভাবে আরও বেশি ভেঙে পড়েন এবং এই মানসিক সমস্যাই মায়ের বুকে দুধ না আসার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এক্ষেত্রে মা এবং পরিবারের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, বাচ্চা জন্মগ্রহণের পর দুধ আসা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং মায়ের পুষ্টি যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলে দুধ আসবেঅতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এবং মানসিক অশান্তি মায়ের বুকের দুধ তৈরির প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেএ জন্য মায়ের পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবেযদি সম্ভব হয় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ মিনিট বিশেষ নিয়মে শবাসন করতে হবে
শবাসনের নিয়ম 
মা বালিশ ছাড়া চি হয়ে আরামের সঙ্গে শুয়ে পড়বেন (বিছানা বা মেঝেতে পাটি বিছিয়ে)হাত দুটি শরীরের দুই পাশে থাকবেদুই পায়ের মাঝে আধা হাত পরিমাণ ফাঁকা থাকবেহালকাভাবে চোখ বন্ধ রেখে নাক দিয়ে লম্বা করে দম নিয়ে মুখ দিয়ে দম ছাড়তে হবে (পাঁচ-ছয়বার)এরপর কিছুক্ষণ (দুই-তিনবার) স্বাভাবিকভাবে দম নিতে হবেএরপর নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দম নিয়ে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে দম ছাড়তে হবেদম নেয়ার চেয়ে ছাড়ার সময় একটু বেশি হবেএরপর মনের চোখে নিঃশ্বাসের প্রবেশপথে মনোযোগ দিতে হবেএতে শরীর ভারী ভারী অনুভব হবেএবার চিন্তা করবেন বিশাল ফাঁকা মাঠে নরম ঘাসের ওপর আপনি শুয়ে আছেনশীতকাল হলে চিন্তা করবেন হালকা গরম বাতাস আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছেগরমকাল হলে চিন্তা করবেন হালকা শীতল বাতাস আপনার শরীরে পরশ বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছেএবার চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ চিন্তা করবেনপাখির কলতান, ঝরনার ছলছল আর পাতার ঝিরিঝিরি শব্দ ও রঙ, ফুলের মিষ্টি সুবাস প্রভৃতিএবার আপনার শিশুকে কল্পনায় প্রচুর পরিমাণে আনন্দের সঙ্গে দুধ পান করাতে থাকবেনতার সঙ্গে খেলবেন, হাসবেনঘুমানোর সুযোগ থাকলে ঘুমিয়ে পড়বেন অথবা ধীরে ধীরে মাথা, হাত-পা নাড়বেন এবং উঠে যাবেন
পানি পান
প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিতপানি পানের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াতে হবেভাতের সঙ্গে কাঁচা লবণ খেতে হবে (অতিরিক্ত পানি খাওয়ার কারণে যাতে শরীরে লবণের ঘাটতি না হয়)তবে যাদের হাইপ্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ আছে তারা কাঁচা বা পাতে লবণ খাবেন না
ঘন ঘন দুধ খাওয়ানো
বাচ্চাকে যত ঘন ঘন দুধ দেবেন তত বেশি দুধ আসতে থাকবেবাচ্চা যদি খুব কম দুধ পান করে সে ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে দুধ চিপে ফেলে দেবেনপ্রথম ছয় মাস প্রতিদিন ৮-১০ বার বা বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী আরও বেশি বার দুধ পান করাতে হবেএকবারে ১০-২০ মিনিট বা তারও বেশি সময় ধরে দুধ দেবেন
খাবার
মাকে যতটুকু সম্ভব বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার (যেমন- মাছ, ডিম, দুধ প্রভৃতি) খেতে হবেঅতিরিক্ত দুধ তৈরিতে যে খাবারগুলো সরাসরি সহযোগিতা করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজর, শিম, বাদাম (চীনাবাদাম, কাজুবাদাম), কালোজিরার ভর্তা, লাউ, ডুমুর, পালংশাক, কলমিশাক, টমেটো প্রভৃতি
বিশেষ সতর্কতা
দুধদানকারী মা যদি এইডস, যক্ষ্মা বা অন্য কোনো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন তবে দুধদানের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিসকের অনুমতি নিতে হবেদুধদানের সময় মায়ের কখনোই কোক, পেপসি, স্প্রাপ্রাইট প্রভৃতি কোমল পানীয় এবং চা, কফি পান করা ঠিক নয়কারণ এগুলো থেকে ক্ষতিকর কিছু উপাদান মায়ের শরীরে এবং মায়ের শরীর থেকে দুধের সঙ্গে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করতে পারেএতে বাচ্চা অসুস' হয়ে পড়তে পারে
লেখক : ডায়েটিশিয়ান

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি

No comments:

Post a Comment